জেনে নিনঃ সুদ গ্রহণ, সুদ দান এবং এর ভয়াবহতা!
.
সুদ ইসলামের একটি কবিরা গুনাহ (Major Sin)। নবী (সাঃ) সুদখোরের প্রতি এবং সুদ দাতার প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। এটি একটি চূড়ান্ত ধরনের হারাম কাজ!
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরের প্রতি, সুদদাতার প্রতি, এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষী দু’জনের প্রতিও। [১]
“অভিশাপ” শব্দটাকে অনেকে হালকা ভাবে নেন। এখানে রাসূল (সাঃ) সুদখোর, সুদদাতাদেরকে চরম গুনাহগার হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। পরবর্তী হাদিসগুলো তে একটু চোখ বুলিয়ে নেন। কথাগুলো মাথার মাঝে গেঁথে নিন।
অনেকে টাকার প্রয়োজন বলে ব্যাংক থেকে সুদে লোন নিয়ে থাকেন। একটা জিনিস বুঝা দরকার যে কবিরা গুনাহগুলো কেউ প্রয়োজনের তাগিদে করতে পারেন না। এর জন্য আপনি ক্ষমা পাবেন না।
একটা উদাহরণ এর মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি…( শেখ হাইতাম আল হাদ্দাদ এর বর্ণিত ঘটনা )
এক বোন আমার কাছে এসে বললো যে তার উপর অনেক ঋণ। এজন্য সে একজন লোকের কাছে চাকরি করতে গেছে। এবং সে লোকটি ঐ বোনকে বলেছে যে, “তুমি আমার এ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করবে, এবং মাঝে মাঝে হয়তো আমার সাথে ট্রাভেল করা লাগবে, এবং মাঝে মাঝে হয়তো আমার সাথে একই রুমে রাত্রে থাকা লাগবে।”
তো আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, “ঐ লোকটি মূলত তোমাকে দাসী হিসেবে চাচ্ছে এবং তোমার সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করতে চাচ্ছে। এরকমই তো নাকি বিষয়টা?”
তখন ওই বোন উত্তর দিলো যে, “জ্বী হ্যা। এখন আমি কি এই চাকরিটি করতে পারি যাতে আমার ঋণ শোধ করতে পারি?”
এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে যে আমরা কি তাকে অনুমতি দিতে পারি যে, তুমি ঐ ব্যক্তির সাথে যিনা করতে পারো যাতে ঐ টাকা দিয়া তুমি তোমার ঋণ পরিশোধ করতে পারো?
আমরা কি অনুমতি দিতে পারি?
এই বিষয়টা যেমন ইসলাম অনুমোদন দেয় না ঠিক তেমনি সুদও ইসলাম অনুমোদন দেয় না।
সুদকে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমকক্ষ উল্লেখ করেছেন।
“ হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্ কে ভয় করো এবং বাকী সুদ ছেড়ে দাও। যদি তোমরা ঈমানদার হও।
তারপর যদি না ছাড় তবে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিকট থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে লও। ”
[ সূরাহ বাক্বারা, আয়াত ২৭৮-২৭৯ ]
হাদিসে সুদ এর ভয়াবহতার কথা কি বলা হয়েছে একটু ভেবে দেখি…
আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনেশুনে ১ দিরহামও সুদ গ্রহণ করবে বা দান করবে তা তার জন্য ৩৬ বার যিনা করার চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ। [২]
একবার একটু ভেবে দেখুন। যদি আপনার বোন ভাই বা স্ত্রী কেউ যদি ১ বারও যিনা করে থাকে, তাহলে তার সাথে আপনি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিবেন। তাহলে সুদ গ্রহণ করা বা দেওয়া কতটুকু জঘন্যতম অপরাধ তা একটু ভাবেন।
সর্বশেষ এই হাদিসটা অন্তত একটু মনের ভিতর গেঁথে রাখুন।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সুদের গুনাহর সত্তরতি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যিনা) করা। [৩]
সবকিছু বাদ দিয়ে এই হাদিসটা আরেকবার পড়েন। ihadis অ্যাপস থেকে হাদিসটা নিজে একবার দেখে আসেন। পারলে মুখস্ত করে রাখেন। উপরোক্ত হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে আপনা মায়ের সাথে কাবা ঘরের ভেতর যিনা করার চেয়ে ও নিকৃষ্ট হচ্ছে সুদ গ্রহণ করা বা সুদ দেওয়া।
ভাইরে ভাই, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এটার ভয়াবহতা কত স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। কিন্তু আমরা এত নিশ্চিন্ত থাকি। একবার ও ভাবি না। টাকার প্রয়োজনে সুদে লোন নেই। টাকার প্রয়োজনে কি কখনো মায়ের সাথে যিনার কথা ভেবেছিলেন? যদি না ভেবে থাকেন তাহলে এর চেয়েও ভয়াবহ এই জঘন্য জিনিসটার কথা কিভাবে ভাবেন? নাকি রাসূল (সাঃ) এর কথা যুক্তিসংগত মনে হয় না? অর্থাৎ মায়ের সাথে যিনা করা আপনার কাছে বেশি গুনাহের কাজ এবং সুদ খাওয়া কম গুনাহের কাজ মনে হয়? এরকম মনে হলে ভাই ঈমান নিয়ে ভাবতে হবে।
শেষ কিছু কথা।
সুদ না খেলেও অনেকে সুদ দিয়ে থাকেন। ব্যাংক থেকে লোন নেন। ভাবেন আমি তো আর সুদ খাচ্ছি না। প্রথম হাদিসটা একটু ভালো করে দেখে আসেন। এখানে সুদখোর, সুদদাতা, সুদের রশিদ লেখক এবং সাক্ষী, সবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুদ দেওয়ার মাধ্যমেও আপনি আপনার মায়ের সাথে যিনার চেয়েও জঘন্য কাজ করতেছেন। এটা মাথার মাঝে সেট করে নেন।
ব্যাংকের জব নিয়ে একটু মতবিরোধ আছে। তবে একটা জিনিস বুঝা দরকার। ব্যাংকের জবে আপনি সুদের বিষয়টা অ্যাপ্রোভ করে যাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সুদের রশিদ আপনি নিজেই লিখছেন। প্রথম হাদিসটা আরো একবার দেখে আসেন।
অনেকে ব্যাংক জব জাস্টিফাই করতে চাইবেন। আমার সহজ একটা উত্তর থাকবে। ভাই, জীবন একবার পাবেন। একবার মারা গেলে আর ফিরে আসবেন না। কেন ই শুধু শুধু রিস্ক নিবেন? মরার পর যদি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আরেকবার দুনিয়া তে গেলে অন্য কোনো কাজ করবো। তাহলে কি কাজ হবে? আপনি যদি জানেন যে ব্যাংকের লাভের বড় অংশ আসে সুদ থেকে। যদি বুঝেন যে অন্যের সুদের রশিদ লিখে দিচ্ছেন তাহলেও কি মনে হয় না যে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আপনার প্রতি অভিশাপের কথাই বলেছিলেন।
নিজের দ্বীন সম্পর্কে জানুন। ইসলাম শুধু ধর্মীয় বিষয় আশয় নয়। পুরো একটা সিস্টেম এটা। মেনে চললে নিজেই লাভবান হবেন। আর পাশ কাটিয়ে গেলে নিজের কপাল পুড়াবেন।
ইউটিউব থেকে এই লেকচারটা দেখে আসতে পারেনঃ https://youtu.be/nE9urAO9i54
রেফারেন্সঃ
[১] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৯৮৪, ৩৯৮৫ (ihadis)
Sahih Muslim 1597, 1598 (sunnah.com)
[২] মিশকাত আল মাসাবীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
[৩] ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৭৪ (ihadis)
হাদিসের মানঃ সহীহ হাদিস
বিঃদ্রঃ অনেকে মূলত অজ্ঞতার অভাবে এই জঘন্য গুনাহতে লিপ্ত হচ্ছেন। ভয়াবহতা অনেকে উপলব্ধি করতেছেন না। তাই পোস্ট টা পারলে নিজের টাইমলাইন এ পোস্ট করে রাখুন। কার্টেসি টার্টেসি কিচ্ছু লাগবে না। শেয়ার না করে কপি করে পোস্ট করুন যাতে বেশি মানুষের কাছে পৌছে।
জাযাকাল্লাহ খাইর। 💖
.
,
লেখকঃ https://www.facebook.com/jiaul.marjan
0 Comments